ঢাকা , রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫ , ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
তিস্তায় ফের পানি বৃদ্ধি খুলে দেয়া হয়েছে ৪৪টি জলকপাট তালতলীতে নৌবাহিনীর অভিযান ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ২ ১৬ বছরে একদিনও আসেননি কলেজে ফের নিয়োগ পাচ্ছেন বরখাস্ত হওয়া ৩ শিক্ষক দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাহাড়ে পেয়ারার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি আদমদীঘিতে ৪০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার নাঙ্গলকোটে সাবেক মেম্বারের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ভূরুঙ্গামারীতে ২ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সীলগালা করলো ভ্রাম্যমাণ আদালত ময়মনসিংহে বন বিভাগের ৩০ একর জমি জবরদখল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চিকিৎসক নাজমুল হুদা বিপ্লবের মতবিনিময় মীরসরাইয়ে ড্রাম ট্রাকে লরির ধাক্কায় হেলপার নিহত কানাডায় পাঠানোর নাম করে ১ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রতারণা সাতক্ষীরার সীমান্ত থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন মালামাল জব্দ বরগুনার বামনায় ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ঠাকুরগাঁওয়ে ২ শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ নৈশ্যপ্রহরীর বিরুদ্ধে জালে মিলছে না আশানুরূপ মাছ ঋণ ও দাদনে দিশেহারা জেলেরা পল্লবী থানা হেফাজতে মৃত্যু এসআই জাহিদসহ ৩ জনের আপিলের রায় আজ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ক্ষমা চাইলেন জাপা মহাসচিব পুলিশ কিন্তু এখনও ট্রমাটাইজ-জিএমপি কমিশনার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে সেই স্বাধীন- র‌্যাব গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আরও ২

১৬ বছরে একদিনও আসেননি কলেজে ফের নিয়োগ পাচ্ছেন বরখাস্ত হওয়া ৩ শিক্ষক

  • আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৫ ০৭:৫০:৪৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৫ ০৭:৫০:৪৫ অপরাহ্ন
১৬ বছরে একদিনও আসেননি কলেজে ফের নিয়োগ পাচ্ছেন বরখাস্ত হওয়া ৩ শিক্ষক
গাজীপুর থেকে বিনয় সরকার
গাজীপুরে দীর্ঘ ১৬ বছরের একদিনও ক্লাসে না গিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সরকারি কলেজে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বহিষ্কৃত ৩ শিক্ষক। কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের বহিষ্কৃত ৩ শিক্ষককে ফের নিয়োগ দেওয়ার খবরে তুলপাড় শুরু হয়েছে এলকায়। মন্ত্রণালয়ে অনুপস্থিত থাকার তথ্য গোপন করে নানা দেন দরবার শেষে সোমবার সকালে ওই ৩ শিক্ষক যোগদান করতে কলেজে যান। কিন্তু কৌশলগত কারণে তাদেরকে যোগদান করানো হয়নি।
দুর্নীতির অভিযোগে ১৬ বছর আগে কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মো.জাহাঙ্গীর আলম,ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয়ের প্রভাষক কিশোর কুমার সরকার ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক   ফাতেমা পারভীনকে বরখাস্ত করা হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ১৯৯৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে ওই কলেজের নাম কালিয়াকৈর সরকারি কলেজ। উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভূগোল বিভাগের প্রভাষক হিসাবে এ কলেজে যোগদেন। এরপর ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে ২০০৪ সালের ১৮ জুন নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। একই বছর ২৩ জুন প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। অফিস তথ্য মতে তিনি ২০০৮ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে পরবর্তীতে কলেজে উপস্থিত থেকে আর কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কলেজ গভর্নিং বডি ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে উপাধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক গঠিত তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রভাষক পদের এমপিওভুক্তিও বাতিল করা হয়। কলেজ সূত্র জানায়, কলেজটি জাতীয়করণের জন্য ২০১৩ সালের ২৯ জুন পরিদর্শনকালেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এরপর থেকে তিনি আর কখনোই কলেজে যায়নি। এই দীর্ঘ সময় পর সোমবার তিনি কলেজে যোগদান করতে যান।
তবে যোগদান করতে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ নামে। প্রথম থেকেই আমি এর বিরোধিতা করি। এ কারণে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আমার বিরুদ্ধে লাগেন। দুদকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। থানা, পূলিশ সুপার, জেলা দায়রা জজ আদালতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে  মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এ সব মিথ্যা মামলা আমি লড়তে থাকি।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয়ে প্রভাষক কিশোর কুমার সরকার নিয়োগের পর দুই মাস অনিয়মিতভাবে কলেজে উপস্থিত থাকেন। শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করণের সময়ও তিনি কলেজে নিয়মিত হাজির হননি। ফলে তার এমপিওভুক্ত হননি। তাকে কারণদর্শানোসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নোটিশের জবাব না দেয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক কিশোর কুমার সরকারকে প্রভাষক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কলেজে যোগদান করতে গিয়েছিলেন। কিশোর কুমার বলেন, যে সকল অভিযোগ দিয়ে আমাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। নানা ভাবে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। ২০০৪ সালের ২৩ জুন কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অতিরিক্ত প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান ফাতেমা পারভীন। নিয়োগের পর থেকেই তিনি কলেজ যাননি। পরে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ২০১১ সালে ১৩ আগস্ট প্রভাষকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই তিন শিক্ষক কলেজে নাম অন্তর্ভুক্ত রেখে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কলেজে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেননি। গোপনে কলেজের জাতীয়করণ তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি করেন। তথ্য গোপন করে চাকরি ফিরে পাওয়ার ওই শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। গত ১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) মুহাম্মদ সফিউল বশর স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ৩ জন শিক্ষকের এডহক নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রসহ অধ্যক্ষকে তলব করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষক চাকুরি ফিরে পাওয়ার আশায় সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন। তিনটি মামলা এখনো চলমান। তার আগেই তথ্য  গোপন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এডহক নিয়োগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। গত ৩০ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ‘জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০’ মোতাবেক ওই তিন শিক্ষককে অস্থায়ীভাবে আত্তীকৃত ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের জনবল কাঠামো মোতাবেক ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের জায়গায় বিসিএস ক্যাডার মো. হাবিবুল্লাহ ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিসিএস ক্যাডার ফাতেমা পারভীনের জায়গায় মোসা. রুবা ইয়াসমিন।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন জানান,ওই তিন জন যেহেতু বরখাস্ত তাই তাদের নাম বা পদ সৃজনের শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি। তারপরও তারা বিগত সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পদ সৃজন করেন। পরবর্তীতে তাদের এডহক নিয়োগ না দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুফিয়া বেগম বলেন,বরখাস্তকৃত ৩ শিক্ষককে যে সব বিষয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে সব বিষয়ে বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক নিয়োগ প্রাপ্ত রয়েছেন। যার কারনে  নির্দেশনা আসলেও এই মুহূর্তে তাদের এই কলেজে যোগদান করানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয় ও মাউশিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ওই তিন শিক্ষকের যোগদানের বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি পুনরায় রিভিও করা উচি বলে মনে করছি। 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ